ইউরোপে সর্ব প্রথম ইসলামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন সুলতান ওরহান...
১৩৮৮ সাল পর্যন্ত প্রাচীন থ্রেস ও নতুন রুমিলিযা উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে আসে এবং অন্যান্য এলাকাও বিজিত হয়। এসব এলাকায় আরব ও তুর্কিদের পুনর্বাসিত করা হয় এবং সেখানকার অধিবাসীদের অন্যত্র প্রেরণ করা হয়। এসব উপনিবেশের ফলে খ্রিস্টান জগতে দারুণ উত্তেজনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সার্বিয়ার রাজা খ্রিস্টান রাজ্যগুলোর এক বিরাট ঐক্য স্থাপন করেন এবং বুলগেরিয়া এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করে এবং আলবেনিয়া, ওল্লাচিয়া ও হাঙ্গেরী সমর্থন জানায়। আর পোল্যান্ড সাহায্য প্রেরণ করে।
ইতিহাসে এই যুদ্ধ ‘দ্বিতীয় ক্রুসেড’ নামে অভিহিত হয়েছে। উল্লেখ্য, ১০৯৬ থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের যে ৮টি আক্রমণ চালিয়েছিল, সেগুলোকে ‘ক্রুসেড যুদ্ধ’ বলা হয়। সুলতান বইজিদের আমলে এই পর্যায়ে দ্বিতীয় ক্রুসেড সংঘটিত হয় ১৩৯৬ সালে। হিজরী ৭৯৩ সালে বাইজিদ বুলগেরিয়া জয় করে তাকে তুর্কি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং বুলগেরিয়া রাজার পুত্র মুসলমান হয়ে যান এবং সুলতানের পক্ষ হতে তিনি বুলগেরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে হাঙ্গেরীয় রাজা আতঙ্কিত হয়ে পোপের সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং ইউরোপের সকল খ্রিস্টান রাজ্যের নিকটও আবেদন জানান। পোপের নির্দেশে বহু রাজ্য ব্যাপক যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। বরগুডী, বুইরিয়া, অষ্ট্রিয়া, জার্মানি, হাঙ্গেরি এবং ওল্লাচিয়া যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।সম্মিলিত মিত্রশক্তি প্রথম দিকে বিজয় লাভ করলেও তাদের শেষ পরিণতি অত্যন্ত শোচনীয় হয় পরাজয়ের মাধ্যমে।
দানুব নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীনতম বুলগেরীয় শহর ‘নাইকোপলিসে’ সুলতান বাইজিদের বাহিনী সম্মিলিত ক্রুসেড বাহিনীর মোকাবিলায় অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধ মাত্র তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল, উসমানীয় যোদ্ধারা সম্মিলিত বাহিনীকে মারাত্মকভাবে পরাজিত করে। তাদের হাজার হাজার সৈন্য যুদ্ধে মারা যায় এবং দশ হাজার বন্দি হয়। এই বিজয় সংবাদে সমগ্র মুসলিম জাহানে আনন্দ-উল্লাস করা হয়। মিসরের আব্বাসীয় খলিফা মোতাওয়াক্কেল আলাল্লাহ এক ফরমান আকারে তার শাসন ক্ষমতা উসমানীয়দের নিকট সমর্পণ করেন, যার মধ্য দিয়ে আব্বাসীয় খেলাফতের পতন ঘটে। এই ঐতিহাসিক যুদ্ধ ৭৯৬/১৩৯৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয়। পরবর্তীকালে তুর্কি খেলাফতের পতনের সাথে সাথে ইউরোপে মুসলমানদের যে শোচনীয় পরিস্থিতির শিকার হতে হয়, তা কারও অজানা নয়।
প্রসঙ্গক্রমে ‘মোতামারে আলমে ইসলামী’র সেক্রেটারী জেনারেল ড: এনামউল্লাহ খানের প্রায় চার দশক পূর্বের একটি বক্তব্য উল্লেখযোগ্য। ঢাকায় তিনি আলিয়া মাদ্রাসায় একটি আলোচনা বৈঠকে বলেছিলেন, ‘খেলাফতের পতনের পর ইউরোপে ৩৪টি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ সুলতান ওরখান প্রতিষ্ঠিত ইউরোপের সেই প্রথম মুসলিম সাম্রাজ্যের নাম সম্ভবত ইতহাসও বিস্মৃত হয়েছে।
এখন তো ইউরোপসহ নানা দেশে, শহরে, বন্দরে মসজিদ ভাঙ্গার, অগ্নিসংযোগ করার, কোরআন অবমানার, মহানবী (সা:) এর প্রতি মিথ্যাচার এবং সবশেষে মসজিদে প্রবেশ করে সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে নামাজী হত্যা ইত্যাদি ঘটনাবলী ঘটেছে। এসব সেই ‘ক্রুসেড’ যুদ্ধের সংকেত বহন করে কি? আত্মভোলা মুসলমানদের সজাগ ও সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।

