মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাস এর বিস্ময়কর স্বপ্ন
হযরত সামুরা ইবনে জুন্দুব (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস ছিল, তিনি নামাজ পড়ে সাহাবায়ে কেরামকে জিঞ্জেস করতেন, তাঁরা কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছেন কিনা। যদি কোন সাহাবী স্বপ্ন দেখতেন, তাহলে তা বলতেন। এ নিয়ম অনুযায়ী একদা তিনি সাহাবায়ে কেরামকে জিঞ্জেস করলেন, কেউ কি কোন স্বপ্ন দেখেছে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, না। তিনি বললেন, আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি। দেখলাম, দু’ব্যক্তি আমার হাত ধরে আমাকে পৃণ্যময় ভূমির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আকস্মাৎ আমি দু’ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। তন্মধ্যে একজন উপবিষ্ট এবং অপরজন লোহার ধারালো আঁকড়া বা বাাঁকান লৌহ শলাকা নিয়ে দাঁড়নো। সে উহা উপবিষ্ট ব্যক্তির চোয়ালে প্রবেশ করিয়ে গ্রীবাদেশ পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলছে। অন্য চোয়ালের সাথেও সে একই আচরণ করছে। ইত্যবসরে প্রথম চোয়াল ঠিক হয়ে যাচ্ছেে এমনিভাবে তার ওপর আযাব চলতে থাকে। আমি জিঞ্জেস করলাম, এটা কি? কিন্তু আমার সাথীদ্বয় বল্লেন, সামনে চলুন। সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম। চলতে চলতে এমন এক ব্যক্তির কাছে আসলাম, যে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে এবং অপর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার মাথায় প্রস্তরাঘাত করছে।
যখন তার ওপর প্রস্তর নিক্ষেপ করে, পাথর দূরে ছিটকে পড়ে। সে উহা কুড়িয়ে আনে। ইত্যবসরে তার মাথার আঘাত ভাল হয়ে যায়। তারপর আবার আঘাত করে। (এভাবে তার মাথার শাস্তি চলতে থাকে।) আমি জিঞ্জেস করলাম, এটা কি? আমার সাথীদ্বয় বললেন, সামনে চলুন। আমরা সামনে অগ্রসর হলাম। চলতে চলতে চুলার মত একটি গর্ত দেখতে পেলাম। উহার উপরের দিক সংকীর্ণ এবং ভিতরের দিক প্রশস্ত। উহার মধ্যে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে এবং সেই জ্বলন্ত আগুনে অসংখ্য উলঙ্গ পুরুষ ও নারী জ্বলছে। অগ্নিশিখা তাদেরকে গর্তের মুখ পর্যন্ত নিয়ে আসে।
মনে হয় যেন তারা এখনই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসবে। কিন্ত পরক্ষণেই অগ্নিশিখা স্তিমিত হয়ে আসে এবং তারা গর্তের মধ্যে ঢুকে পড়ে। আমি জিঞ্জেস করলাম, এটা কি? কিন্তু সাথীরা বললেন, সমনে চলুন। অবশেষে চলতে চলতে আমরা একটি রক্তের নদীর কাছে উপনীত হলাম যার তীরে একজন লোক দন্ডায়মান এবং তার সামনে রয়েছে স্তূপীকৃত পাথর, আর অপর এক ব্যক্তি নদীতে (সাতরাচ্ছে)।
যখন সে তীরে ওঠে নদী থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, তখন তীরে দন্ডায়মান ব্যক্তি তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করে তাকে আবার আগের স্হানে পাঠিয়ে দেয়। আমি জিঞ্জেস করলাম, এটা কি? সাথীরা বললেন, সামনে চলুন। সুতরাং আমারা চলতে চলতে ঘন সবুজ শ্যামল এক বাগিচায় এসে পৌছালাম। উহার মধ্যে একটি বড় বৃক্ষ ছিল। উহার নীচে একজন বৃদ্ধলোক এবং অনেকগুলো ছোট ছেলেমেয়ে বসে আছে এবং গাছের কাছে এক ব্যাক্তি অগ্নি প্রজ্বলিত করছে। আমার সাথীরা আমাকে নিয়ে গাছের ওপর চড়লেন এবং আমাকে অতি মনোরম এমন এক প্রাসাদে নিয়ে গেলেন যে, তদাপেক্ষা সুরম্য অট্রালিকা আমি আর কখনও দেখিনি। এ প্রাসাদে একদল বৃদ্ধ,যুবক, নারী ও শিশুকে দেখতে পেলাম। আমি বললাম, আপনারা আজ আমাকে ভ্রমণ করিয়েছেন, এবার আমি যা কিছু দেখেছি এসবের বিশদ বিবরণ তো আমাকে দিন!
সাথীরা বললেন, তাহলে শুনুন।
১। যার চোয়াল চেঁড়া হচ্ছিল, সে হল মিথ্যেবাদী। সে সর্বদা মিথ্যে কথা বলত এবং তার মিথ্যে বহুদূর ছড়িয়ে পড়ত। তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত এ আচরণই করা হবে।
২। যে ব্যক্তির মাথায় প্রস্তরাঘাত করা হচ্ছে, তাকে আল্লাহ ধর্মীয় ঞ্জান দান করেছিলেন (অর্থাৎ, সে একজন দ্বীনী আলেম।) কিন্তু সে রাতে তো পড়ে পড়ে ঘুমাতই, দিনের বেলায়ও আমল করত না। (অর্থাৎ, সে ছিল আলেমে বেআমল।) কিয়ামত পর্যন্ত সে এ শস্তি ভোগ করতে থাকবে।
৩। চুলায় যে নারী-পুরুষ দেখেছেন, উহারা হল যিনাকারী (ব্যভিচারী) এবং
৪। যাকে রক্তের সমুদ্রে দেখলেন, সে সুদখোর।
৫। আর যাকে গাছের নীচে দেখলেন, তিনি হযরত ইবরাহীম (আঃ) এবং তাঁর কাছে যে ছেলেমেয়েদের দেখলেন, ওগুলো মানুষের (অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী) সন্তান।
৬। অগ্নি প্রজ্বলনকারী হলেন জাহান্নামের দারোগা মালেক।
৭। আর প্রথম ঘরটি হল সাধারণ মুসলমানদের এবং এ ঘরগুলে শহীদদের। আমি জিবরাঈল এবং ইনি মীকাঈল। আপনি সামান্য মাথা উঁচিয়ে ওপরে দেখুন। আমি মাথা উঁচিয়ে দেখলাম, মেঘের ন্যায় একটি প্রাসাদ। তিনি বললেন, উহা আপনার বিশ্রামাগার। আমি বললাম, তাহলে আমাকে আমার ঘরে যেতে দিন। তাঁরা বললেন, এখনও আপনার হায়াত বাকী আছে, পূর্ণ হয়নি। যদি হয়াত পূর্ণ হয়ে যেত, তাহলে আপনি ঐ প্রাসাদে চলে যেতেন। (বুখারী শরীফ)

