কুরবানীর আগে শাওয়াল মাসের ছয় রোজার গুরুত্ব ও ফজিলতঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করার জন্য। আল্লাহতায়ালার একান্ত ইচ্ছা তাঁর প্রত্যেক বান্দা তাঁর ইবাদত সম্পন্ন করার মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে। ইবাদত মূলত দুই প্রকার। ফরজ ইবাদত; যেমন- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি। নফল ইবাদত; যেমন- নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ, দান-খয়রাত, নফল রোজা রাখা ইত্যাদি।
মানব জাতি মূলত তখনই মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রকৃত সম্মানিত ও প্রিয় হবে, যখন তার প্রতিটি কাজ হবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই উদ্দেশ্যে। সুখে-দুঃখে একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করবে, আল্লাহকেই ভালোবাসবে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টায় সব সময় ব্যস্ত থাকবে। ফরজ ইবাদত সম্পন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে নফল ইবাদতে অধিক মনোযোগী হবে। নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে নফল রোজা বান্দাকে অতি সহজেই মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। কারণ, রোজা এমন একটি ইবাদত যা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢালস্বরূপ এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নিজেই দিয়ে থাকেন।
রমজান চলে যাওয়ার পরও বান্দা যেন সিয়াম সাধনা অব্যাহত রাখেন সে জন্য প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখের রোজা, আশুরার রোজা, ৯ জিলহজ আরাফার দিনের রোজা, ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রোজাসহ অন্যান্য নফল রোজার বিধান দিয়েছেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ফরজ নামাজের কমতি গুলো পূরণ করতে যেমন নফল নামাজ রয়েছে তেমনি ফরজ রোজার পরও শাওয়ালের সুন্নত রোজা রয়েছে রমজানের পূর্ণতা প্রদান করতে। রোজাদার যদি অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি পাপাচার-কামাচার প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে না পারে, তাহলে তার রোজার সওয়াব কমে যায়। আর কমতির সওয়াব পূর্ণ করতেই শাওয়ালের ছয়টি রোজাসহ বছরজুড়েই রয়েছে নানা উপলক্ষে নফল রোজা। এই শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজার শুকরিয়া আদায় করা হয়। যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন তখন তাকে অন্য নেক আমলের তৌফিক দেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। জলীলুল কদর সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আনসারি রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম শরিফ)হজরত সাওবান রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এই হলো এক বছরের রোজা।’ (নাসায়ি শরিফ)।
হজরত উবাইদুল্লাহ রাহিমুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ, আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব?’ তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখ এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখ, তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। ’ (তিরমিজি শরিফ)।
লেখকঃ এম ফিল গবেষক, মুফাসসিরে কোরআন, বেতার ও টিভির ইসলামী উপস্থাপক; খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

